1. info@www.gowainghatdarpan.online : গোয়াইনঘাট দর্পণ :
  2. gowainghatdarpa@gmail.com : গোয়াইনঘাট দর্পণ : গোয়াইনঘাট দর্পণ
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোয়াইনঘাটে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসা ভারতীয় গরু বন্ধে প্রশাসনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গোয়াইনঘাটে খেলাফত মজলিসের উপজেলা কমিটি পুনর্গঠন সুযোগের অভাবে অনেকের প্রতিভার বিকাশ ঘটে না : অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বিছনাকান্দি পাথর লুটের প্রতিবাদ করায় মেডিকেল শিক্ষার্থীকে হ/ত্যা/র হু-মকি: পুসাগের প্রতিবাদ গোয়াইনঘাটে তৃতীয় পক্ষের আশ্বাসে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থেকে বাঁচলো দুই গ্রাম গোয়াইনঘাটবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রভাষক জাহিদ আহমদ গোয়াইনঘাটবাসীকে জাতীয় এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত লোকমান উদ্দিনের ঈদ শুভেচ্ছা পুসাগের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন গোয়াইনঘাটে ডৌবাড়ী প্রবাসী কল্যাণ ট্রাস্টের শাড়ী-লুঙ্গি বিতরণ গোয়াইনঘাটে সদর ইউনিয়ন জামায়াতের ইফতার মাহফিল

জীবন্ত লাশ

  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ৯ আগস্ট, ২০২৪

আমি দাড়িয়ে আছি, একটি বিশাল মাঠের প্রান্তে।চারদিকে শুনশান নীরবতা।কারো কোনো কোলাহল নেই। কিছুদিন পূর্বেও এ মাঠে সোনালী ফসল ছিলো।ধানের স্তুপ ছিলো।ছিলো কৃষকের আনন্দমাখা মুখের ঝলক।এখন নেই, কোনো কিছুই নেই।পুরোটা মাঠ জুড়ে আছে শুধু বৃষ্টির পানি। আমি এখন সেই মাঠের এক প্রান্তে দাড়িয়ে আছি। আমি আশপাশ তাকাচ্ছিলাম। নীচে থাকালাম। উপরে থাকলাম।আমার বুকটা ধড়ফড়িয়ে উঠলো।আমি কিছু অনুভব করতে পারলাম।আমি কিছুর গন্ধ পাচ্ছি। হ্যা,এটাও বুঝার বাকি রইলো না।এ গন্ধ লাশের গন্ধ। আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাচ্ছি।

অশান্তি আমাকে গ্রাস করলো। এ গন্ধ কোথা থেকে আসছে!! কোন মায়ের কোল খালি হয়েছে!!
এমন দ্বিধাদ্বন্দের মাঝে আমি প্রযুক্তির পথে হাটলাম।প্রযুক্তির কাছে সাহায্য চাইলাম। বললাম: প্রযুক্তি! তোমাকে আমার ভীষণ প্রয়োজন। আমাকে নিয়ে চলো সেই লাশের কাছে,যে লাশের গন্ধ বাতাসে ভাসছে। প্রযুক্তি আমাকে সাহায্য করলো,আমাকে নিয়ে গেলো সেই লাশের কাছে,যে লাশের বার্তা আমাকে বাতাস দিয়েছিলো।
আমি লাশের দিকে তাকালাম। অতঃপর…!

আমি নিজেকে হারিয়ে ফেললাম।দুঃখে কষ্টে জর্জরিত হলাম। ফের লাশের দিকে তাকাবো, মন সায় দিলো না।তবুও তাকালাম। আমাকে জানতে হবে, স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে একজন জীবন্ত মানুষ কেনো লাশ হলো?

এবার ভালোভাবে তাকালাম। আমি বিস্মিত হলাম।এ লাশ তো কথা বলছে, এ লাশের গন্ধ তো বার্তা ছড়াচ্ছে, এ লাশের রক্ত তো জীবন্ত মানুষের মতই।
বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে আমি লাশের সাথে কথা বলা শুরু করলাম। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম:

আমি: তোমার নাম কি?
লাশ: আবু সাঈদ।

আমি: আবু সাঈদ! তুমি তো লাশ, তুমি কথা বলছো কেমনে? আমি এমন লাশ কোনোদিন দেখিনি। আমি তোমাকে দেখে বিস্মিত হয়েছি,যেনো স্বপ্নপুরে স্বপ্ন দেখছি।
আবু সাঈদ: আমি কোনো লাশ নই।আমি মৃত নই।আমি জুলুমের স্বীকার হয়েছি।আমি হলাম শহীদ। শহীদরা কখনো মরে না।

আমি: তোমার প্রতি কারা জুলুম করেছে?
আবু সাঈদ: ৭১ সালে লক্ষ্য শহীদের বিনিময়ে স্বাধীন করা এই রাষ্ট্রে যারা স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে তারা।

আমি: তোমাকে কেনো তারা শহীদ করলো?
আবু সাঈদ: তাদের স্বৈরশাসন এবং পাশবিকতাকে সমর্থন করিনি।তাদের জুলুমের ভয়কে উপেক্ষা করে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়েছি তাই।

আমি: আবু সাইদ! তোমার রক্তাক্ত দেহ যে বার্তা দিচ্ছে সেটি কিসের বার্তা?
আবু সাঈদ: এ বার্তা জালিমের বিরুদ্ধে নবজাগরণের এবং এক নতুন সূর্যোদয়ের।এ বার্তা স্বৈরাচার পতনের এবং আমার মতো হাজার আবু সাঈদের রক্তের বিনিময়ে গড়ে উঠা এক নতুন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার।

জীবন্ত লাশ-২

প্রশ্নোত্তরের পর্ব শেষ হলো।আবু সাঈদকে বললাম: আবু সাঈদ, ভালো থেকো তুমি! আবার দেখা হবে পরকালে,প্রিয় জান্নাতে।আবু সাঈদ বলল: আমার জন্য রহমতের দোয়া করতে ভুলে যেও না বন্ধু!
আবু সাঈদের সাথে আমার সাক্ষাৎ শেষ হলো।এমন সময় আমি শুনতে পেলাম “ভাই,পানি লাগবে’র” আওয়াজ।আমি তখন বিস্মিত হলাম, সংকুচিত হলাম।আমার মনে হলো,এ আওয়াজ সাধারণ কোনো আওয়াজ নয়।এমন দ্বিধাবোধ থেকে আমার আমিটাকে জিজ্ঞেস করলাম।বললাম: হে আমি!
এ আওয়াজ এমন কেনো?এ আওয়াজ এতো অসাধারণ কেনো? এ আওয়াজের সাথে কি মিশে আছে যা আমাকে বিস্মিত দ্বিধান্বিত করছে?
আমার আমি বলল,এ আওয়াজের রহস্য উদঘাটন করতে হলে তোমাকে যেতে হবে সেখানে, যেখান থেকে এ আওয়াজ উঠছে।
ফের মুখাপেক্ষী হলাম প্রযুক্তির,বললাম: প্রযুক্তি!
আমাকে নিয়ে চলো সেখানে,যেখানে এ আওয়াজ ধ্বনিত হচ্ছে।প্রযুক্তি আমার কথায় সায় দিলো, আমাকে নিয়ে গেলো সেখানে। অতঃপর…।
এখানে মিছিল হচ্ছে,পুরো শহর ভেসে যাচ্ছে তারুণ্য জোয়ারে। সবার মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে, আবু সাইদের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না।
আমিও ঢুকে গেলাম মিছিলের মাঝখানে।সুরে সুরে বললাম: আমার ভাই শহীদ কেনো? হাসিনা তুই জবাব দে!
আশ্চর্য! মিছিল চলছে।কিন্তু হঠাৎ সেই মধুময় অসাধারণ আওয়াজটা কোথায় হারিয়ে গেলো।না,আর শুনা যাচ্ছে না “ভাই,পানি লাগবে”। যেনো পানিতে মিশে গেছে কিংবা হাওয়ায় উড়ে গেছে।

তখন চোখে পড়লো,কয়েকজন ছাত্র কাউকে ঘিরে বসে আছে, তাদের চোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রু ঝরছে।আমি তাদের কাছে গেলাম।দেখলাম, এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
আমি অবাক হলাম।অপলক নয়নে তাকিয়ে রইলাম সেই গুলিবিদ্ধ যুবকের দিকে।আমার চোখ থেকেও অশ্রু ঝরলো। আমি দেখলাম, আসমান-জমিনও কাদছে।আমি অনুভব করলাম,এ যুবকের শরীর থেকেও তাজা রক্ত বেরুচ্ছে,এ লাশের গন্ধও বাতাসে ভাসছে।এ লাশও কথা বলছে।এ যেনো আরেক আবু সাইদ। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম:

আমি: তোমার নাম কি?
যুবক: মীর মুগ্ধ।
আমি: তোমার নামের মতো তোমার সুরে এতো মুগ্ধতা ছিলো কেনো?
মুগ্ধ: আমি জানি না। হয়তোবা এটা ছিলো আল্লাহর নিয়ামত কিংবা এই সংগ্রামের বরকত।
আমি:আবু সাঈদের মতো তোমারও শরীর থেকে কেনো তাজা রক্ত বেরুচ্ছে? কেনো তার মতো তোমার গন্ধ বার্তা ছড়াচ্ছে ?
মুগ্ধ: কারণ আমরা একই পথের পথিক।আমরা সংগ্রামের জন্য জন্মেছিলাম। সংগ্রাম করেই শহীদ হলাম আর শহীদরা শাহাদাতের পর বার্তা ছড়ায়।
আমি:তোমার এ বার্তা কিসের?
মুগ্ধ: আমার এবার্তা সংগ্রামের বার্তা।
আমি: তোমার এ বার্তা কাদের জন্য?
মুগ্ধ: আমার এ বার্তা সেই মীর মুগ্ধদের জন্য,যারা শতবছর পরে হলেও আমার এবং আবু সাঈদের প্রতিশোধ নিতে আসবে এবং স্বৈরতন্ত্র ও জুলুমের অবসান ঘটাবে।
মীর মুগ্ধ শহীদ হয়েছেন। কিন্তু সেই “ভাই! পানি লাগবে’র” আওয়াজ থেমে যায় নি।পিছন ফিরে দেখি, একজন কিশোর ডেকে ডেকে বলছেন : ভাই,পানি লাগবে।আমার আমিটাকে বললাম : হে আমি!দেখো, মীর মুগ্ধরা শহীদ হয়েও ফুরিয়ে যান না।তারা বারবার এভাবেই ফিরে আসেন অন্য কারো রূপে অন্য কোনো আকৃতিতে।

জীবন্ত লাশ-৩

আজকের মিছিলকে বিদায় জানালাম।বিদায় জানালাম মীর মুগ্ধকে।পথ ধরলাম আপন নীড়ের।অর্ধেক পথ হাটলাম।হঠাৎ আমার চোখে পড়লো,ওখানে ধোয়া উড়ছে,ঠাস ঠাস গুলির শব্দ শুনা যাচ্ছে।না জানি,ওখানে কি চলছে, কোন মায়ের কোল খালি হচ্ছে।আমি কি ওখানে যাবো! আমার সংশয় হলো,আমি ভীতসন্ত্রস্ত হলাম।
আমার বোধশক্তি তখন জাগলো।বলল: তোমাকে আজ শঙ্কিত হলে চলবে না।তোমাকে আজ জানতে হবে, এ ধোয়া কিসের এ গুলি কাদের? তুমি কি ভুলে গেছো আবু সাঈদের বার্তাকে, মীর মুগ্ধের তাজা খুনকে,তাদের সংগ্রামের আকাঙ্খাকে? তোমাকে ভুলে গেলে চলবে না,তুমি মীর-সাঈদের বার্তাকে বাংলা মায়ের সন্তানদের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য। তুমি তাদের রক্তের প্রতিশোধের জন্য। সব সংশয়কে দূর করো, সব ভয়কে জয় করো। সামনে চলো এক নবোদয়ের জন্য, এক নতুন বাংলাদেশের জন্য।

আমি যেনো তখন নতুন প্রাণ ফিরে পেলাম।প্রতিজ্ঞা করলাম,আমি আজ থামবো না। সব জুলুমকে উপেক্ষা করে সব শঙ্কাকে দূর করে আজ আমি চলবো দূর থেকে দূরান্তে।
আমি চললাম আমার গন্তব্যে।কিন্তু ওখানে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সামনের বিল্ডিংটা যেনো দেয়াল হয়ে দাড়িয়ে আছে।
আমি তখন প্রযুক্তির সহায়তা নিলাম।বললাম,প্রযুক্তি! আমাকে নিয়ে চলো সেখানে,যেখান থেকে এ ধোয়া উড়ছে।প্রযুক্তি আমাকে নিয়ে গেলো।
সেখানের দৃশ্যপট ছিলো অকল্পনীয় অসহনীয়। আহ, কি নৃশংসতা,কি পাশবিকতা!
একি অত্যাচার! একি অনাচার!
এযেনো এক টুকরো জাহেলিয়াত।
আমি দেখছি,ওখানে আরেক আবু সাঈদকে। হায়েনারা গুলি ছুড়ছে, সে দু’হাত প্রসারিত করে বুক পেতে তাদের গুলিকে আলিঙ্গন করছে। সে চিৎকার করে বলছে: হে হায়েনারা! দেখি তোমাদের বন্দুকে কত বুলেট আছে।তোমাদের সব বুলেটকে পরাজিত করার জন্য একজন আবু সাঈদের বক্ষই যথেষ্ট।
আমি দেখছি আরেক মীর মুগ্ধকে। গুলির আঘাতে তার “ভাই,পানি লাগবে’র” সুমধুর কন্ঠ ক্রমে ক্রমে বন্ধ হয়ে আসছে।
আমি দেখছি,জানালার পাশে পড়তে বসা শিশুটির বক্ষ গুলির আঘাতে বিদীর্ণ হচ্ছে।
আমি দেখছি, সবাই এক এক করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে। আমি শুনছি, শত শত শিশুর আত্ম-চিৎকার, হাজার হাজার মজলুম বোনের হৃদয়ের আর্তনাদ।এ যেনো লাশের মিছিল, এ যেনো পৃথিবীর বুকে এক টুকরো জাহান্নাম।
আমি তখন বাংলাদেশকে জিজ্ঞেস করলাম:
ওহে বাংলাদেশ! তোমার বুকে পড়তে বসা শিশুটি শহীদ হচ্ছে কেনো? আবু সাঈদের মায়ের কোল খালি হলো কেনো? মীর মুগ্ধদের “পানি লাগবে ” আওয়াজ বন্ধ হয়ে আসছে কেনো? তোমার বুকে আজ এতো রক্ত ঝরছে কেনো? কেনো আজ এতো অত্যাচার অবিচার?
অশ্রুসিক্ত নয়নে বাংলাদেশ আমাকে উত্তর দিলো:
আমি দুঃখিনী বাংলাদেশ, আমি ব্যথিত বাংলাদেশ। অত্যাচারে স্বৈরাচারে হচ্ছি যে নিঃশেষ।

হায়েনারা চলে গেলো।আমি শহীদদের কাছে গেলাম,তাদের সাথে আলিঙ্গন করলাম।তাদের রক্তে আমি সিক্ত হলাম। অতঃপর জিজ্ঞেস করলাম:

আমি: আজ থেকে কি তোমাদের মিছিল শেষ?
শহীদরা: না!
আমি:তবে তোমরা কিভাবে মিছিল দেবে? তোমরা তো শাহাদাত বরণ করেছো।
শহীদরা: আমরা শহীদ হয়ে মিছিল দেবো।আমরা তোমাদের সাথে থাকবো রাজপথে, তোমাদেরকে শক্তি জোগাবো যুদ্ধের ময়দানে। আমাদের এ মিছিলের নাম হবে লাশের মিছিল।

আমি: তোমাদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে আগামীতে যারা যুদ্ধক্ষেত্রে লড়বে, তাদের প্রতি তোমাদের বার্তা কি?
শহীদরা: তোমরা বীরদের মতো লড়াই করো।মনে রেখো,তোমরা সংগ্রামের জন্য জন্মেছ। চাটুকারিতার জন্য নয়।তোমাদের এ সংগ্রাম স্বৈরতন্ত্র ও জুলুমের অবসানের জন্য,হাজার শহীদের রক্তের প্রতিশোধের জন্য। তোমাদের এ সংগ্রাম এক স্বপ্নীল বাংলাদেশ গড়ার জন্য।

লেখক: সুফিয়ান বিন আতাউর রহমান

শিক্ষার্থী, মাদরাসাতুল উলূম দারুল হাদীস হরিপুর বাজার মাদ্রাসা।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন

স্বত্ব © গোয়াইনঘাট দর্পণ কর্তৃক সংরক্ষিত

প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট