1. info@www.gowainghatdarpan.online : গোয়াইনঘাট দর্পণ :
  2. gowainghatdarpa@gmail.com : গোয়াইনঘাট দর্পণ : গোয়াইনঘাট দর্পণ
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোয়াইনঘাটে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসা ভারতীয় গরু বন্ধে প্রশাসনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গোয়াইনঘাটে খেলাফত মজলিসের উপজেলা কমিটি পুনর্গঠন সুযোগের অভাবে অনেকের প্রতিভার বিকাশ ঘটে না : অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান বিছনাকান্দি পাথর লুটের প্রতিবাদ করায় মেডিকেল শিক্ষার্থীকে হ/ত্যা/র হু-মকি: পুসাগের প্রতিবাদ গোয়াইনঘাটে তৃতীয় পক্ষের আশ্বাসে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থেকে বাঁচলো দুই গ্রাম গোয়াইনঘাটবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রভাষক জাহিদ আহমদ গোয়াইনঘাটবাসীকে জাতীয় এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত লোকমান উদ্দিনের ঈদ শুভেচ্ছা পুসাগের ইফতার মাহফিল সম্পন্ন গোয়াইনঘাটে ডৌবাড়ী প্রবাসী কল্যাণ ট্রাস্টের শাড়ী-লুঙ্গি বিতরণ গোয়াইনঘাটে সদর ইউনিয়ন জামায়াতের ইফতার মাহফিল

বর্তমানে কত টাকা হলে যাকাত দিতে হবে : ওলীউর রহমান

  • প্রকাশিত: শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫

দর্পণ ডেস্ক : প্রতিটি সামর্থবান তথা নেসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী বালেগ, স্বাধীন এবং সুস্থ মস্তিস্কের অধিকারী ‎মুসলমান নর-নারীর উপর যাকাত ফরজ। যাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম। পবিত্র কুরআনে নামাজের ‎সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৮২ বার যাকাতের আলোচনা এসেছে। অথচ অনেক সামর্থবান মুসলমান যাকাত ‎‎দেননা এবং অনেকে জানেনও না যে তার উপর যাকাত ফরজ বা যাকাত ফরজ হলে কিভাবে যাকাত আদায় ‎করতে হবে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- ‘তোমরা সালাত আদায় করো, যাকাত দাও এবং রাসূল সা. এর ‎আনুগত্য করো যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পারো।’ (সূরা নূর: ৫৬)‎

রাসূল সা. বলেন, যে ব্যক্তি যাকাত আদায় করবে তাকে জান্নাতের বিশেষ দরোজা ‘বাবুস সাদাকাহ’ দিয়ে ‎জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে।’ (মুত্তাফাকুন আলাইহি, মিশকাত: ১/৩২৬)‎

কাদের উপর যাকাত ফরজ: আজাদ, বালেগ ও সুস্থ মস্তিস্কের অধিকারী মুসলমানের উপর যাকাত ফরজ। এই ‎‎গুণসমূহ থেকে কোনো একটি পাওয়া না গেলে তার উপর যাকাত ফরজ হবে না। এই গুণসমূহের অধিকারী ‎‎কোনো মুসলমানের উপর যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য শর্ত হলো- ১. তার কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে ‎হবে, ২. তার এই সম্পদ তার নিত্য প্রয়োজনীয় সম্পদের অতিরিক্ত এবং ঋণমুক্ত হতে হবে, ৩. এই সম্পদের ‎উপর পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হবে হবে। (আলমগিরী: ১/১৭২-১৭৪, আল বাহরুর রায়িক: ২/২০২, ‎বাদায়িউস সানাইয়: ২/৮৮)‎

‎নেসাব: নেসাব হলো যে পরিমাণ সম্পদ হলে যাকাত ফরজ হয়। এ ক্ষেত্রে শরিয়ত দুটি পরিমাপ ধার্য করেছে। ‎একটি হলো স্বর্ণ আর অপরটি হলো রৌপ্য। স্বর্ণের নেসাব হলো আরবী ওজনের ভিত্তিতে ২০ মিসকাল, যা ‎‎তোলার হিসেবে সাড়ে সাত তোলা। আর রূপার নেসাব হলো দু’শ দিরহাম, যা তোলার হিসাবে সাড়ে বায়ান্ন ‎‎তোলা। কারো কাছে যদি তার নিত্য প্রয়োজনীয় সম্পদ ছাড়া সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন ‎‎তোলা রৌপ্য অথবা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকে তাহলে তার উপর যাকাত ফরজ। (হেদায়া: ১/২১১, ‎তাতারখানিয়া-জাকারিয়া: ৩/১৫৫)‎

নিত্য প্রয়োজনীয় সম্পদ: নিত্য প্রয়োজনীয় সম্পদ অর্থাৎ যে সম্পদের উপর যাকাত আসে না সেগুলো হলো- ‎বসবাসের ও ভাড়া দেওয়ার  ঘর এবং ফ্ল্যাট, ঘরের আসবাব পত্র, ব্যবহারের কাপড়-চুপড়, চলাচলের বাহন, ‎চাষাবাদের পশু, কারখানার যন্ত্রপাতি ও হাতিয়ার পত্র, খেদমতের দাস-দাসি, নিজের এবং নিজের উপর ‎নির্ভরশীল স্বজনদের দৈনন্দিন খরচ ইত্যাদি। এসব সম্পদের উপর যাকাত আসে না। (কিতাবুল মাসাঈল: ‎‎২/২২৩)‎

যাকাতের হিসাব: যদি কারো কাছে কিছু স্বর্ণ, কিছু রৌপ্য এবং কিছু টাকা পয়সা থাকে তাহলে সবগুলোর মূল্য ‎একত্রিত করে যদি কোনো একটি নেসাব পূর্ণ হয়ে যায় (যেমন সবগুলো একত্রিত করে যদি সাড়ে বায়ান্ন ‎‎তোলা রূপার বর্তমান বাজার মূল্যের সমান হয়ে যায়) তাহলে সেই নেসাব অনুযায়ী যাকাত আদায় করা ‎ওয়াজিব। (হিন্দিয়া: ১/১৭৯, দুররে মুখতার: ৩/২৩৪)‎

বর্তমানে সোনা ও রূপার মধ্যে কোনটির হিসাব ধরতে হবে: আল্লাহর রাসূল সা. এর যুগে সাড়ে বায়ান্ন তোলা ‎রূপা এবং সাড়ে সাত তোলা সোনার মূল্য প্রায় সমান ছিলো। বর্তমান সময়ে দু’টির মূল্যের মধ্যে বিশাল ‎ব্যবধান হয়েগেছে। সাড়ে সাত তোলা সোনার মূল্য প্রায় ১২ লক্ষ টাকা অন্য দিকে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার ‎মূল্য ৮৫/৯০ হাজার টাকা। আর নিয়ম হলো দেশি-বিদেশী মুদ্রা ও ব্যবসায়িক পণ্যের নিসাব নির্ধারণের ক্ষেত্রে ‎‎স্বর্ণ এবং রৌপ্যের মধ্যে যেটির হিসাব ধরলে দরিদ্র মানুষের বেশি উপকার হয় সেটিকেই পরিমাপক হিসেবে ‎গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে রূপাকে পরিমাপক হিসেবে গ্রহণ করলে যাকাত দাতার সংখ্যা বেশি হবে এবং ‎‎দরিদ্র মানুষেরা বেশি উপকৃত হবে। একারণে বর্তমান সময়ে দেশি-বিদেশী মুদ্রা ও ব্যবসায়িক পণ্যেও যাকাত ‎রূপার নেসাবের হিসাবেই আদায় করতে হবে। (আহসানুল ফতওয়া: ৪/৩৯৪, আল ফিকহুল ইসলামী: ২/৬৬৯)‎

সহজ কথা হলো- বর্তমানে যদি আপনার কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় সম্পদ ছাড়া সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্য ‎পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে আপনার উপর যাকাত ফরজ। আর যাকাত দিতে হবে যাকাতযোগ্য সম্পদের ‎চল্লিশ ভাগের এক ভাগ বা শতকরা ২.৫%। সুতরাং আপনার মালিকানায় থাকা সোনা রূপার মূল্য, হাতে থাকা ‎নগদ অর্থ, ব্যবসায় বিনিয়োগকৃত অর্থ, ব্যাংক বা অন্যান্য অর্থিক প্রতিষ্ঠানে সঞ্চয়ী হিসাবে রক্ষিত অর্থ, ‎প্রাইজবন্ড, বীমা পলিসি, পোস্টাল সেভিংস সার্টিফিকেট, ডিপোজিট পেনশন স্কীম এবং এরূপ নিরাপত্তামূলক ‎তহবিলে জমাকৃত অর্থ এক সাথে হিসাব করে এর চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসেবে আদায় করতে হবে। ‎তবে প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ নিজের দায়িত্বে সোপর্দ না হওয়া পর্যন্ত তার উপর যাকাত ধার্য হবেনা।‎

যাকাত আদায় করতে হবে চন্দ্রবর্ষের হিসাবে : যাকাত আদায় করতে হয় চন্দ্রবর্ষের হিসাবে। (শামী-করাচী: ‎‎২/২৫৯, শামী-জাকারিয়া: ৩/১৭৫) আর চন্দ্রবর্ষ হলো ৩৫৪ অথবা ৩৫৫ দিনে। আর সৌরবর্ষ হলো ৩৬৫ ‎অথবা ৩৬৬ দিনে। অর্থাৎ সৌরবর্ষ হতে চন্দ্রবর্ষ ১১ বা ১২ দিন কম। তাই সৌরবর্ষের হিসাবে আপনি যাকাত ‎আদায় করলে মূল যাকাতের সাথে অতিরিক্ত আরো ১২ দিনের হিসাব যুক্ত করে যাকাত দিতে হবে। অর্থাৎ ‎শতকরা ২.৫% এর পরিবর্তে ২.৫৭% আদায় করতে হবে। এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।‎

কত টাকা হলে যাকাত দিতে হবে: উপরের আলোচনা থেকে বুঝা গেল যে, বর্তমানে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা ‎অথবা এর মূল্য পরিমাণ অর্থ কারো কাছে থাকলে এর চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত বাবত আদায় করবে ‎হবে। এই হিসেবে সর্বনি¤œ ১৮ ক্যারেটের ১ ভরি রূপার বর্তমানে বাজারে দাম ১,৭১৪ টাকা হলে সাড়ে বায়ান্ন ‎ভরি রূপার দাম হবে ১৭১৪×৫২.৫=৮৯,৯৮৫ টাকা। সতর্কতার জন্য ৮৮ হাজার টাকা ধার্য করতে হবে। ‎অর্থাৎ বর্তমানে যাকাতের নেসাবের সর্বনিম্ন পরিমাণ হলো ৮৮ হাজার টাকা। কারো নিত্য প্রয়োজনীয় সম্পদ ‎ছাড়া সোনা, রূপা, নগদ টাকা, ব্যবসায় নিয়োজিত পণ্যসামগ্রির মূল্য একত্রিত করে যদি ৮৮ হাজার টাকা হয়ে ‎যায় এবং এই সম্পদ তার কাছে পূর্ণ এক বছর থাকে তাহলে এই সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ ‎শতকরা ২.৫% যাকাত বাবত আদায় করতে হবে।‎

লেখকঃ ওলীউর রহমান, সিনিয়র মুহাদ্দিস জামেয়া আয়শা সিদ্দিকা, পেশ ইমাম ও খতীব পূর্বভাটপাড়া জামে মসজিদ, ‎ইসলামপুর, মেজরটিলা, সিলেট।‎

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন

স্বত্ব © গোয়াইনঘাট দর্পণ কর্তৃক সংরক্ষিত

প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট